বঙ্গোপসাগর থেকে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে লালমনিরহাটে গত ৩দিন ধরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) বিকাল থেকে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের পর বৃষ্টির শুরু হয়, যা শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সকাল ১১টা পর্যন্ত চলতে থাকে। এই অসময়ের বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রোপা-আমন ধান ও সবজি ক্ষেত। এছাড়াও, শ্রমজীবী খেটে-খাওয়া সাধারণ মানুষেরাও চরম বিপাকে পড়েছেন।
বুধবার বিকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ১১টা পর্যন্ত লালমনিরহাটে ২৫মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে সাধারণ মানুষ বাইরে বের হতে পারেননি এবং অনেকেই বিভিন্ন স্থানে আটকে গেছেন। ফলে তাদের দৈনন্দিন জীবন যাত্রায় কাজেও ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে।
বিভিন্ন সড়কের পাশে দেখা গেছে, অনেকেই বৃষ্টিতে আটকা পড়ে দোকানের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরছেন। রিক্সাচালকেরা পলিথিন দিয়ে রিক্সা ঢেকে রিক্সা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রিক্সা চালক জাহাঙ্গীর বলেন, বৃষ্টি আসলে আর কী করার আছে? আমাদের রিক্সা চালাতেই হবে, রিক্সা না চালালে টাকা উপার্জন হবে না।
এক অভিভাবক বলেন, আমার স্ত্রী সরকারি কলেজে মাস্টার্স পরীক্ষা দিচ্ছে। পরীক্ষা শেষে নিয়ে আশার সময় তখনই বৃষ্টিতে আটকে গেলাম। পড়ে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বারান্দায় দাড়িয়েছি। এভাবে রাস্তায় দুবার দাড়াতে হয়েছে।
তবে এই বৃষ্টি ও বাতাসে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। চলতি মৌসুমে রোপা-আমন ধান ও সবজি চাষ নিয়ে চাষিদের চিন্তা বাড়ছে।
কৃষকেরা জানান, খরচ বেড়ে গেছে এবং শীতকালীন সবজির চারা রোপণ করতে গিয়ে বারবার সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে সবজি খেতের ক্ষতি হচ্ছে এবং রোপা-আমন ধানও হেলে পড়ছে। যেসব ধানের শিষ বের হয়নি, সেগুলোর ক্ষতি হবে। আবারও যে ধানগুলো শিষ বের হয়েছে তারও ক্ষতি হবে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের কৃষক মোঃ হযরত আলী, মোঃ আব্দুল রহমান বলেন, সবজি চাষীদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। গত কয়েক মাস যাবৎ সবজি চাষ নিয়ে বিপাকের মধ্যে রয়েছি। বৃষ্টিতে সবজি চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, এতে উৎপাদন ব্যাহত হবে।
কোদালখাতা ও ফুলগাছ গ্রামের কৃষক হাফেজ আলী, শাহানত আলী, দুলাল হোসেন, নূর আমিন বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে জমিতে থাকা ধানের গাছ পড়ে গেছে। উঁচু জমিতে ধান ভালো হলেও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গাছগুলো হেলে পড়েছে। আমাদের ২ বিঘার ধান হেলে পড়েছে, এতে করে ফলন কমে যাবে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোঃ সাইখুল আরিফিন জানান, ঝড়ের প্রভাবে কিছু জায়গায় ধান গাছ হেলে পড়েছে। দানা শক্ত হয়ে যাওয়া ধানের ক্ষতি হবে না, তবে যে সব ধানের শিষ বের হচ্ছে এবং দানা এখনও শক্ত হয়নি, সেগুলোর ক্ষতি হবে। অতিবৃষ্টির কারণে আগাম শীতকালীন সবজি চাষী কৃষকদের ক্ষতি হচ্ছে।